গল্পের শিরোনাম
recent

'তোমার কাছে কোনটা বড়? আমার ভালোবাসা না কি তোমার ধর্ম ?

'তোমার কাছে কোনটা বড়? আমার ভালোবাসা না কি তোমার ধর্ম ?' প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে লতা ওর ভালোবাসার ছেলে প্রতিকের দিকে। প্রতিক কোন উত্তর দেয় না। শুধু একটু হাসিমুখেই তাকিয়ে থাকে। লতাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু বাধ সেধেছে ওদের ধর্ম। প্রতিক হিন্দু আর লতা মুসলমান। সুতরাং কোন পরিবারই যে এটা মেনে নেবে না এটা খুব ভালো করেই জানে ওরা দু'জন। কিন্তু কি করবে। স্রষ্টার পরিহাস না করুণা ওরা বলতে পারে না। একজন আরেকজনকে গভীরভাবে ভালোবাসে। যে ভালোবাসার ভবিষ্যতটা যে কি হবে তা কল্পনাও করতে পারছে না। গত একবছর ধরেই লুকিয়ে ওদের এই একটি জায়গায় প্রেম করে যাচ্ছে যার পরিণতি সম্পর্কে দুজনেই অজ্ঞাত।
একবছর আগে এই নদীর ধারে কৌতুকচ্ছলে পরিচয় হয় লতার সাথে প্রতিকের। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তা ভালোবাসার পর্যায় গড়ায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই ভালোবাসা আর অগ্রসর হয় না। লতা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী। আর প্রতিক একটি প্রাইভেট কলেজে এমবিএ করছে।
মাঝে মাঝে প্রতিক ভাবে কি ভাবে লতার প্রেমে সে আবদ্ধ হল। ও সেদিন নদীর ধারে বসে আপন মনে স্বপ্নে জাল বুনছিল। আর কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে ওর গায়ের উপর হোচট খেয়ে পড়ে। প্রথমে খুবই বিরক্ত হয় প্রতিক। খুব কড়া করে কিছু বলতে ‌গিয়েও থেমে যায়। মেয়েটা পায়ের গোড়ালী ডলছে। ব্যথায় চোখ দুটো লাল হয়ে জল বেরিয়ে আসছে। প্রতিক উঠে দাড়ায়, বলে '‌লাগেনি তো' ।মেয়েটি শুধু ঘাড় নাড়ে, কোন উত্তর দিতে পারে। মেয়েটি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আবার বসে পড়ে। আহত পায়ে ভর দিতে পারছে না। আবেদন ভরা চোখে প্রতিকের দিক তাকায়।
প্রতিক। যে কিনা মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকাতে জানে না। আজ কি হল। মেয়েটির জলভরা নীল চোখের ছবি ওর মনের মধ্যে আটকে যেয়ে এক মুগ্ধ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। মেয়েদের সাথে ও তেমন একটা মেশে না। কিন্তু কি যেন আজ কি হলো মেয়েটিকে দেখার পর থেকে ওর মধ্যে এক পরিবর্তন ঘটে গেছে। মেয়েটির আবেদনভরা চোখ ও উপেক্ষা করতে পারে না। এগিয়ে যায় কাছে, একটা রিকশা ডেকে ওকে বাসায় দিয়ে আসে। ওদের বাসার ৩ টা লাইন পরেই মেয়েটির বাসা। মেয়েটির ধন্যবাদ নিয়ে আবার ফিরেও আসে। কিন্তু হৃদয়ের গহীন কোনে যে ঢেউ আজ জেগে উঠেছে তা থামাতে পারে না। এরপর প্রতিদিনই ওই নদীর ধারে ওই জায়গাটায় যেয়ে ও বসে থাকে। যদি কখনো দেখা হয় তার সাথে।
এর একসপ্তাহ পরে প্রতীকের পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে আপনাকে দেখলে মোটেও একালের ছেলে বলে মনে হয় না।' প্রতিক তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি। প্রতিক উঠে দাড়ায় আর বলে 'সবাই যদি এ কালের রোমান্টিজম নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে সেকালের ছবি দেখার মত যে কেউ থাকবে না। সব তো ইতিহাস হয়েই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।' মেয়েটি হেসে ওঠে। হাসলে ওর গালে টোল পরে। প্রতিক আবার মুগ্ধ হয়। মেয়েটি কাছে এগিয়ে আসে বলে আমি লতা। ইচ্ছা করে তো আপনি নিজের পরিচয়টুকুও দিলেন না আবার আমার পরিচয়, তাও নিলেন না। তাই নির্লজ্জের মতো আমিই আমার পরিচয় দিয়ে গেলাম। প্রতিক হেসে বলে 'আমি প্রতিক'। সেই থেকে ওদের কাছে আসা শুরু। আজ তা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
কিছুদিন থেকেই লতার বিয়ে নিয়ে ওর বাবা-মা চিন্তিত হয়ে আছে। ভালো একটা ছেলে পাওয়া গেছে। ছেলে ব্যাংকের ম্যানেজার। দেখতেও যথেষ্ট ভালো। সেই থেকে লতার মন খারাপ। প্রতিককে সে বিয়ের কথা বলেছে কিন্তু প্রতিক কিছুই বলেনি। কিন্তু এভাবে আর চলতে পারে। যে কোন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যে এবার ওদের হবেই। প্রশ্নটা করার পর প্রতিক চুপচাপ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে ওঠে'লতা তুমি আমায় বিয়ে করার জন্য তোমার ধর্ম ত্যাগ করতে পারবে'। লতা কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে'এ প্রশ্নের জবাব আমি এখন দিব না। আমি তোমাকে ভালোবাসি সত্য তাই আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করতে পারবো না। যদি তুমি মুসলমান হতে পারো তাহলেই আমাদের বিয়ে হতে পারে। তোমাকে যে আমি কত ভালোবাসি তা আমি বোঝাতে পারবো না। কিন্তু আমার সমাজ, আমার ধর্ম আজ আমাকে আটকে রেখেছে। সময়ে আমি আমার ধর্মকে অবশ্যই প্রাধান্য দিব।' এই বলে লতা চলে যায়, প্রতিক বসে থাকে আনমনে। সূর্যাস্ত দেখে। একসময় উঠে বাসায় চলে যায়।
এই দিনের পর থেকে ওদের মধ্যে আর কোন যোগাযোগ হয় না। হারিয়ে যায় সময়ের গর্ভে। শুধু স্মৃতি নিয়ে প্রতিক আর লতা দিনযাপন করে। কেউ জানে না আর কারো খবর।

৪ বছর পর।

দিন আসে দিন যায়। কেটে যায় সময়। কিন্তু মনকে তো আর আটকে রাখা যায় না। ৪ বছর আগে এবং পরে প্রতিকের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের তুলনায় চোখ দু'টো স্থির ও শান্ত। কথা বলার সময় মুখ গম্ভীর হয়ে থাকে। যে প্রাইভেট কোম্পানীতে এখন প্রতিক চাকরি করে অধনস্তরা সবাই প্রতিককে ভয় পায়। তাই সবাই চেষ্টা করে ওকে এড়িয়ে চলতে। প্রতিক বুঝতে পারে কিন্তু নির্বিকার। রাতে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বই পড়ে। টেবিলের সামনে লতার একটা বাধানো ছবি। পড়তে পড়তে কখনও চোখ আটকে যায় ওই স্থির ছবিতে। কল্পনার জগত তখন আর স্থির থাকে না। সে চলে অবিরাম অবিরত সামনের দিকে। কখনও ক্লান্ত হয়ে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়ে। আবার কখনও বিছানায় গিয়ে বিশ্রাম নেই। এভাবেই কাটে প্রতিকের জীবন।
সকালে প্রতিক ঘুরতে বের হয়। আজ আর অফিসে যাবে না। যদিও এ সময়টা সে বিছানাতেই কাটায়। কিন্তু আজ খুব ভোরেই প্রতীকের ঘুম ভেঙে যায়। তারপর আর ঘুমাতে পারেনি। আলো ফোটার সাথে সাথে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে আসে প্রতীক। আজকাল রাস্তাতে অনেক গাড়ির পরিমাণ অনেক বেশি। রাস্তাঘাতে প্রতিদিনই কোন কোন জায়গায় অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। আজকাল যারা রাস্তাতে বের হয় তারা হয়ত আয়ু হাতে নিয়েই বের হয়। এরকম ভাবতে ভাবতেই প্রতিক রাস্তায় অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে থাকে। রাস্তা হবে এমন সময় ট্রাফিক সিগনাল পরে যেতেই দাড়িয়ে যায় প্রতীক। প্রতিকের পাশ দিয়ে একজন লোক একরকম তাড়াহুড়ো করেই ওর পাশ দিয়ে হেটে যায়। একটু আগে যা প্রতিকের কল্পনায় ছিল এখন প্রতিক তা বাস্তবে দেখতে পায়। তবে কোন গাড়ি নয় - একটি রিকশা পাশ দিয়ে এসে লোকটিকে ফেলে দেয়। কিছুলোকের ভিড় জমে যায়। সবাই দাড়িয়ে দেখে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না। ভীড় ঠেলে প্রতীক এগিয়ে যায়। একটি রিকশা ডেকে প্রতিক লোকটিকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে। অপরিচিত লোকটি শুধু পায়ে একটু চোট পেয়েছে আর হাত কেটেছে। হাসপাতালে পৌছে দিয়ে প্রতিক একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে বেরিয়ে আসে। গেটের সামনে দাড়িয়ে রিকশার জন্য ওয়েট করতে থাকে। একটু পরেই হুড ওঠা একটা রিকশা এসে দাড়ায় সামনে। মেয়েলি একটা হাত রিকশাওয়ালার দিকে টাকা বাড়িয়ে দেয়। এই দেখে প্রতিক অন্য দিকে তাকায়। কিন্তু রিকশা থেকে যে নামে সে দেখতে পায় প্রতিককে। কাছে এগিয়ে আসে।'কেমন আছ'? লতা বলে। চমকে তাকায় প্রতিক। সেই চোখ, সেই নিখুঁত কপালের গড়ন, টোলপড়া গাল সেই হাসি, সেই মধুর কণ্ঠস্বর যা সব সময় প্রতিকের কল্পনার জগতের সাথী সেই যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হয়ত বিস্ময়ের অবধি থাকে না।'ভাল' এইটুকু উত্তরেই চুপ হয়ে যায় প্রতিক। সন্ধানী চোখে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত জরিপ করে লতা। তারপর বলে কাজ না থাকলে আমার রুমে একটু এসে বসতে পার। প্রতিক শুধু মাথা নেড়ে লতার পিছু নেয়।'কেন এসেছিলে? লতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তরে আসার কারণটা বলে প্রতিক। লতা শুধু হাসে আর কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পরে বলে,'যাক আমার দুর্ঘটনার সময় তোমার সাথে পরিচয় আর এখন অচেনার দুর্ঘটনার সাথে আবার দেখা। হয়ত এরকমই পৃথিবীর নিয়ম।' প্রতিক জিজ্ঞাসা করে বিয়ে করেছ। লতা চুপ করে থাকে। প্রতিক উত্তর বুঝে নেয়। লতা চোখ তুলে তাকাতেই প্রতিক বলে'আমি দুঃখিত। কখনই নিজের সীমাকে অতিক্রম করা ঠিক নয়। সীমা অতিক্রমকারী কখনও ভালো কিছু করতে পারে না।' লতা শুধু তাকিয়ে থাকে। প্রতিক আবার বলে,'কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। নিজে তখন বেকার ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বড় সে সমস্যাটা ছিল তোমার আমার ধর্ম, সংস্কৃতি। যা কখনও মিলবে না।' এবারে লতা উত্তর দেয়'তাই বলে পালিয়ে গেলে কেন, আমার সাথে যোগাযোগও তো কখনও করনি। খোঁজ নিয়ে দেখোনি আমি কেমন আছি? তোমার ভালোবাসাটা কি কর্পূরের মতই ছিল, কিছুক্ষণ পড়ে উড়ে গিয়েছিল।' 'না, তা নয়। আমি যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আর যায়নি। পাছে পুরানো কথা প্রকাশ হয়ে তোমার কষ্ট বেড়ে যায় সেই ভয়ে' বলে প্রতিক।
আর কোন কথা হয়না। দু'জনেই চুপচাপ। কিছুক্ষণ পরে প্রতিক বের হয়ে আসে। লতাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার রোগী নিয়ে।
যে বিষয়গুলো প্রতিক নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল নিজের অগোচর্‌ে আজ আকস্মাত তা সামনে চলে এলো। বুঝতে পারে না প্রতিক যে ছাইচাপা দিয়ে আগুনটা নিয়ে নিজের মধ্যে এতদিন দগ্ধ হয়েছে আজ তা লতাকে দেখার পর কেমন করে সামলাবে। চিন্তা করতে করতেই সেই নদীর ধারে চলে আসে। সেই জায়গা যেখানে লতার সাথে প্রতিকের প্রথম দেখা হয়েছিল ওই জায়গায় বসে পড়ে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় ওর কল্পনার জগতে। হারিয়ে যায় সময়জ্ঞান, হারিয়ে যায় স্থান। দুপুর গড়িয়ে বিকাল চলে আসে। প্রতিক তখনও ধ্যানগ্রস্থের ন্যায় বসে আছে ও যেন ওর মধে নেই।

কেউ এসে একজন ওর পাশে বসে। বুঝতে পারে প্রতিক। মাথা ঘুরিয়ে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। যাকে সে মনে মনে এতক্ষণ কল্পনা করছিল, যাকে এই মূহুর্তে কাছে চেয়েছিল সেই এসে পাশে বসেছে।'জানতাম এখানেই তোমাকে পাওয়া যাবে' টোল পড়া গালে হেসে লতা বলে। প্রতিক আবার তাকিয়ে শুধু একটা প্রশ্ন করে-'তুমি তো ডাক্তার। কোন রোগীর আগে চিকিৎসা কর - মুসলমান না হিন্দুর'। লতা উত্তর দেয়'আমি মানুষের চিকিৎসা করি হিন্দু না মুসলিম তা আমার কাছে কোন ভেদ নেই।' প্রতিক তখন আবার বলে'তাহলে আমিও তো মানুষ। আমাদের ভালোবাসার বাধা কোথায়। ধর্মের জন্য তো মানুষ, মানুষের জন্য যে ধর্ম। তাহলে ধর্ম কিভাবে আমাদের ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাড়ায়?' লতা উত্তর দেয়,'ধর্ম তো আমাদের বাধা দেয়নি। বাধা দেয় আমাদের সমাজ। আমরা কেউই সমাজের বাইরে নই। সমাজে চলতে হলে তো সমাজকে মনে রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে।' প্রতিক বলে,'তা ঠিক, যার ধর্ম তার কাছে। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়েই একবার তুমি আমার কাছ থেকে সরে গিয়েছিলে? তা কেন?' 'সরে গিয়েছিলাম তা আমার ভুল ছিল। কিন্তু তার জন্য যে শিক্ষাটা পেয়েছি তা কম নয়। কিন্তু সমাজের ভয়েই পিছনে ছিলাম সামনে আগায়নি' বলে লতা।
প্রতিকঃ যে সমাজের জন্য তুমি আমায় ত্যাগ করলে, সে সমাজ আজ তোমায় কোথায় নিয়ে রেখেছে? তার ভালোবাসা আমার দরকার নেই যে নিজের সমাজের জন্য ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে পারে।
অব্যাক্ত ব্যাথায় লতা তাকায় প্রতিকের দিকে। কান্নাভেজা কণ্ঠে লতা বলে ওঠে, তোমার কাছ থেকে দুরে গিয়ে এই শিক্ষাটাই আমার উপলব্ধিতে আসে। আমাদের তৈরি সমাজই আজ আমাদের নিজের জন্য বিচ্ছিন্ন করছে। একটু চুপ করে থেকে লতা আবার বলে - আমি প্রতিককে ভালোবাসি, সে মানুষ এটাই আমার কাছে বড়। সুতরাং তুমি কি, কি বিশ্বাস কর তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।'
প্রতিকঃ এ কথাটি যদি ৪ বছর আগে বলতে তাহলে হয়ত এতদিন আমাদের মিছে কষ্টতে দুঃখ পেতে হত না।
লতাঃ কষ্ট হয়েছে সত্যি। কিন্তু কষ্ট না হলে শিক্ষাটা যে আর হত না।
প্রতিকঃ কিন্তু এখন যে কিছুই করার নেই। আমার যদিও বা বিয়ে হয়নি কিন্তু তোমার?
লতাঃ আমি বিয়ে করিনি। বাসা ছেড়ে চলে এসেছিলাম কারণ অদের কথা মানতে পারবনা । তোমাকে আমি যে স্থানে বসিয়েছি, সে স্থানে অন্য কাউকে আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না। সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার মনের পবিত্রতা নষ্ট করতে চাইনা। একজনকে চিনেছি, ভালোবেসেছি তাতেই আমার সুখ। সবার সাথে আমি তা ভাগ করতে চাই না। কিন্তু তাই বলে বিয়ের বন্ধনে নিজেকে আমি আটকাতেও চাইনা। ভালোবাসার মূল লক্ষ্যই কি বিয়ে?
প্রতিকঃ ভালোবাসার মূল লক্ষ্য প্রেম। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা, ভালোবাসা থেকে প্রেম। প্রেমহীন ভালোবাসার তো কোন অর্থ নেই। বিয়ে একটা উপলক্ষ মাত্র। প্রত্যাশাহীন ভালোবাসাই হচ্ছে প্রেম। একসাথে পথ চলার জন্য একটা সহজ রাস্তা হচ্ছে বিয়ে।
লতাঃ তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসতে পেরেছি এটাই যে আমার কাছে সবচেয়ে বড়। তুমি কি করবে সে তোমার কাছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।
প্রতিকঃ আমার কাছে আমি তোমায় ভালোবাসি সেটাই বড়। এখানে ধর্ম, সমাজের দোহাই দেয়া অবান্তর। আগে মানুষ তারপরে ধর্ম ও সমাজ।
ভারী কণ্ঠে লতা উত্তর দেয় এতদিনে শিখেছি আত্মতৃপ্তিটাই বড় কথা। আত্মসন্তুষ্টি যেখানে সেখানেই স্রষ্টার সন্তুষ্টি। যেখানে আমার সন্তুষ্টি আমি সেখানেই যাব। তোমার কাছ থেকে আমার বেশি কিছু পাবার নেই। আমাদের ভালোবাসায় আর কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু তাই বলে তুমি তোমার ধর্মের কাছে ছোট হও তাও আমি চাইব না। শুধু চিরদিন আমার পাশে থেক। আমায় মনে রেখ। এই আমার তোমার কাছে কামনা।
এর পর আর কিছু বলার থাকে না। দুজনেরই কথা শেষ হয়ে যায়। গোধূলীর রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে দু'জনই। হয়ত আপন ভবিষ্যত চিন্তায় হারিয়ে যায় বহুদূরে। একসময় লতা হাত বাড়িয়ে প্রতিকের হাত ধরে। মৃদুকণ্ঠে আবার বলে, লতার মত সারাজীবন তোমায় পেচিয়ে রাখবো, আগাছা ভেবে কোনদিন ছুড়ে ফেলবে নাতো।
প্রতিক লতার হাতে মৃদুচাপ দেয়। আর একটু হাসে। লতা তার সমস্ত প্রশ্নের জবাব ওই হাসির মধ্যেই পেয়ে যায়। পরম নিশ্চিন্তে প্রতিকের কাধে মাথা রাখে। হালকা শীতল বাতাস বয়ে যায়। মাথার উপর থেকে উরে যায় নাম না জানা একঝাক পাখি। আর দু'টি মানুষ পরম নিশ্চিন্তে চুপকরে বসে থাকে সবকিছু ভুলে।
ABC

ABC

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.