গল্পের শিরোনাম
recent

বেকার ছেলেদের প্রেম।

একটাই ভাল টি-শার্ট আমার। ইস্ত্রি করে পড়লে খুব একটা খারাপ দেখায় না।মুখে কিছু না দিয়েই চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে চললাম।পকেটে খুচরা খাচড়া মিলে আছে ৫০ টাকা।কাল ফোন দিয়েছিলাম বন্ধু রিয়াদ কে। ১০০ টা টাকা ধার চেয়েছিলাম।কিন্তু বলল তার কাছে নেই।যাক বন্ধু মানুষ মিথ্যা হয়ত বলে নি।
এই বাস, টেম্পুতে ধাক্কাধাক্কি মারামারি করে শেষ পর্যন্ত ইন্টারভিউ হলে পৌছালাম।আজকাল কোন জায়গায় লবিং ছাড়া চাকুরী হয় না।কিন্তু গ্রাম থেকে আসা ছেলেদের সে যতই মেধাবী আর ভাল ডিগ্রীধারি হোক না কেন তাদের কোন লবিংকারী চাচা,মামা থাকে না।তাই চাকুরীটা হলো না।ইন্টারভিউ বোর্ডের ম্যানেজার ৮ লক্ষ টাকা চাইল।এত টাকা আমার মত ৮ টা মাহফুজকে বেঁচলেও হয়ত পাওয়া যাবে না।তাই বের হয়ে আসলাম সেইখান থেকে। বাসায় পৌছাতে না পৌছাতেই রিফার ফোন।রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম রিফার কান্নাকাটি।
—কি হয়েছে রিফা কাঁদছ কেন?
—বাবা আমার বিয়ের পাত্র দেখছেন।
—কি বলছ তুমি?
—তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবা?
—এভাবে বলছ কেন? আমি আজই তোমার বাবার সাথে কথা বলব।
—হাঃ হাঃ বাবা যখন শুনবে তুমি বেকার তখনি তোমাকে বাতিল করে দিবেন।তার কাছে বেকার মানেই বাতিল।
—তাহলে আমি কি করব? বলে দাও।
—আমি জানি না।কিচ্ছু জানি না।কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।কিছু একটা করো।
—তুমি কিছু চিন্তা করো না।আমি দেখছি কি করতে পারি।
এই কথা বলেই ফোন কেটে দিলাম।ভাবছি কি করা যায়।কিন্তু কিছু মাথায় আসছে না।প্রচন্ড ভালবাসি আমি রিফাকে।অন্য কারো সাথে দেখতেই পারব না।আমার এত সংগ্রাম,এত যুদ্ধ সব তো ওরি জন্য।নাহ কিছু একটা করতেই হবে।দরকার হলে আজকেই বিয়ে করে ফেলব রিফাকে।কিন্তু বিয়ে করতেও তো টাকার দরকার।হঠাৎ ভাবলাম আরেহ আমি এত চিন্তা করছি কেন?আমার পিচ্চি বেলার বন্ধু টিংকু তো আছেই।
টিংকু আর আমি দুইজনেই একসাথে ঢাকা এসেছি।একসাথেই লেখাপড়া শেষ করেছি।দূর সম্পর্কের এক মামার লবিং থাকায় ভাগ্যের ফেরে আজ একটা ভাল চাকুরি করে সে।বিয়ে শাদী করবে কিছুদিন পর।টিংকুর কাছে হাজার দশেক টাকা কিছুই না।সাঁত পাঁচ ভেবে ফোন দিলাম তাকে।অনেকক্ষন পর রিসিভ হলো ফোনটা।
—দোস্ত কি অবস্থা?
—ভাল নারে দোস্ত।রিফার বাপে তার বিয়ের জন্য পাত্র দেখতাছে।
—আহারে।তুই তাইলে এখন কি করবি?
—আর কি করমু।রাস্তা একটাই।ওরে বিয়ে করমু।আজ কালের মধ্যে।কিন্তু হাত খালি। ১০ হাজার টাকা দেনা দোস্ত।তোর কাছে তো এইটা হাতের ময়লা।
—দোস্ত বিশ্বাস কর এই মুহুর্তে আমার কাছে বিষ খাওয়ার ও পয়সা নাই।১০ হাজার টাকা কোথায় পাবো? চাকুরীটা শুরু করেছি মাত্র।
—দোস্ত দেখ না ম্যানেজ করতে পারিস কিনা?
—দোস্ত ম্যানেজ করতে পারলে কি আর তোকে না করতাম।তুই আমার অনেক কাছের বন্ধু।তোর সাহায্যে আসতে পারলে বরং খুশি হতাম।
—ঠিক আছে দোস্ত। দেখি কি করতে পারি।
এই কথা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।খুব খারাপ লাগছিল।কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।রিফাও ফোন দিচ্ছিল বারবার।কিন্তু কি বলব মেয়েটাকে জানি না।তাই ফোন রিসিভ করলাম না।অনেক ভেবে চিন্তে ভাবলাম টিংকুর বাসায় যাই ও টাকা দিতে না পারুক বুদ্ধি তো দিতে পারে।যেই ভাবা সেই কাজ।
তবে টিংকুর বাসায় গিয়ে যেয়ে যা দেখলাম তা হয়ত কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।টিংকুর বাসায় বিশাল পার্টি।মদ আর ভদকার বোতল খুলে বসে আছে টিংকুর বন্ধুরা।এদের মধ্যে সবাইকেই আমি চিনি।সবাই বন্ধু ছিলাম একসময়।ভাগ্যের পরিহাসে আজ এরা সবাই পোষ্টে আর পার্টে আমার থেকে অনেক উচুঁতে।দরজা খোলাই ছিল।পুরোটা খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকতে জেতেই শুনলাম আমাকে নিয়েই ওখানে কথা হচ্ছে।টিংকুকে কে যেন বলল,
—কিরে টিংকা তোর প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ড মাহফুজ রে পার্টিতে দাওয়াত দিছ নাই?
—হু ইজ মাহফুজ? দেখ ভাই আমি মাহফুজ টাহফুজদের চিনি না।এইসব বেকার বাতিল ফকিরদের সাথে আমি টিংকা চলি না।
—হেঃ হেঃ আগে তো তোদের গলায় গলায় ভাব ছিল এখন কি হলো?
—দেখ আগের কথা বাদ দে।সময় আর জীবনের প্রয়োজনে কত জনের সাথে মিশতে হয় তাই বলে সবাইকে কি বন্ধু ভাবতে হয়?
—হুম ঠিক।ওইসব ফকিরের ছেলের সাথে তোকে মানায় না।
—ঠিক বলছস।আর এইসব ফকিরের পোলাদের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত না।খালি ২ দিন পর পর টাকা ধার চায়।আজকেই এই মাহফুজ আমার কাছে টাকা চাইল ১০ হাজার।বিয়া নাকি করব।খাইতেই পায় না বিয়ার শখ।
—তুই দিলি?
—আরেহ ধূর তোর মাথা খারাপ? এইসব ফকিরদের বাতিল মালদের একবার টাকা দিলে তা আর ফেরত পাওয়া যায় নাকি।আমি কি এতই বোকা যে টাকা দিমু? হাঃ হাঃ।
ঘরে না ঢুকে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম আমি।দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন যেন।যে টিংকু মেসে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের হাতে ভাত খাইয়েছি, কস্টের টিউশনির টাকা দেশে না পাঠায় পরীক্ষার ফরম ফিল আপের জন্য তার হাতে তুলে দিয়েছি আজ সে টিংকুর কাছে আমি একটা বাতিল মাল।হাহ জীবন টা আসলেই চরম এক বাস্তবতার মুখোমুখি করল আমাকে।এইসব ভাবতে ভাবতে হাঁটছি হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা বাইক তীব্র গতিতে বেড়িয়ে গেল আর একরাশ নোংরা কাঁদা আমার একটাই জোড়া তালি দেওয়া ভাল শার্ট টাকে নোংরা করে দিল।বাইক ওয়ালে দেখলাম।চালকের আসনে বসে আছে রিয়াদ।আমার সেই বন্ধু যার কাছে গতকাল ১০০ টাকা চেয়েছিলাম কিন্তু নাই বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল অথচ আজ সে মজা করে গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে বাইকে ঘুরছে।এই সেই রিয়াদ যাকে একসময় নিজের টাকা দিয়ে বেনসন সিগারেট খাওয়াতাম।কারন তার পকেটে সিগারেট খাওয়ার মত পয়সা থাকত না।রিয়াদের গার্লফ্রেন্ড কে দেখে নিজের ভালবাসার মানুষটির কথা মনে পড়ে গেল।মোবাইল বের করে দেখলাম ২৫ টা মিসকল আহারে কত ভালবাসে আমাকে মেয়েটা।সারা জীবন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য পুরাই পাগল হয়ে আছে।কিন্তু মেয়েটা আমার কাছে ভাল থাকবে না।চিরজীবন কস্ট আর সংগ্রামি করতে হবে তাকে।সহসা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম।ফোন দিলাম রিফাকে।বললাম,
—হ্যালো কি সমস্যা রিফা? বার বার ফোন দিচ্ছ কেন?
—এইভাবে কেন কথা বলছ? কি ব্যাবস্থা করলে জানার জন্য ফোন দিচ্ছি।আমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি শুধু তুমি বলবে আর সব কিছু ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসব।
—সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে আসবে কেন? আমি তোমাকে রাখব কোথায়? এই সব নাটক ছাড়।বাবা যেইখানে চায় বিয়ে করে নাও।
—এইসব কি ধরনের কথা? তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?যদি বিয়েই না করো তাহলে প্রেম করেছিলে কেন?
—ইচ্ছে হয়েছে করেছি।এখন আর তোমাকে ভাল লাগে না।আর দয়া করে আমাকে ডিসটার্ব করবে না।বাই।ভালো থেকো।
এই কথা বলেই ফোন টা বন্ধ করে দিলাম।যতই মানা করি তারপরো একবার না বারবার ডিস্টার্ব করবে আমায় রিফা কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলে আর কয়বার করবে?থাক কয়েকদিন কাঁদবে। তারপর এম্নি ঠিক হয়ে যাবে।বাবার চাপাচাপিতে এক সময় বিয়ে করবে তারপর স্বামী সন্তান নিয়ে নিজেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে।তারপর ও অনেক ভাল থাকবে,সুখে থাকবে।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রেল লাইনের কাছে চলে এসেছি খেয়াল নেই।আচ্ছা এইখানে লাইনের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লে কেমন হয়?সব যন্ত্রনা,সব কস্টের পরিসমাপ্তি।বাস্তবতার নির্মম কষাঘাত আর সহ্য হচ্ছে না।কিন্তু না তাও পারলাম না।বৃদ্ধ বাবা মায়ের করুন মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে বার বার।চাতক পাখির মত চেয়ে রয়েছেন তারা আমার দিকে।
আবার বাসায় ফিরে আসলাম।শার্ট টা ধুলাম।কাল আরেকটা ইন্টারভিউ আছে।চাকুরিটা হবে না জানি তারপর ও আশা।আমার মত বেকার বাতিলদের যে আশাই সবকিছু।
ABC

ABC

1 comment:

  1. Harrah's Casino and Racetrack in Richmond, VA | Mapyro
    777 Harrah's 영주 출장마사지 Blvd in 전라남도 출장샵 Richmond, 경기도 출장마사지 VA 28906. Directions 파주 출장안마 · (877) 226-4247. 충주 출장샵 Visit Website. http://caesars.com/harrahs-casino

    ReplyDelete

Powered by Blogger.